১৯৭১ সালের ৯ মার্চ মওলানা ভাসানী পল্টনের জনসভায় জনগণকে প্রত্যক্ষ ম্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপাইয়া পড়ার আহ্বান জানিয়ে ১৪-দফা দাবীনামা পেশ করেন। বলেন, ‘লাকুম দীনুকুম ওলিয়াদিন’। সভার শুরুতেই তিনি গণআন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন, তাঁদের স্মরণে গায়েবানা জানাজায় ইমামতি করেন।
৯ মার্চ পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত বিশাল জনসভায় মওলানা ভাসানী ঘোষিত ১৪-দফাঃ
১। বিগত ৯ জানুয়ারি (১৯৭১) সন্তোষ সম্মেলনে এবং ১০ জানুয়ারি পল্টন ময়দানের জনসভায় ঘোষিত স্বাধীন পূর্ব বাংলা প্রতিষ্ঠার দাবির প্রতি দ্ব্যর্থহীন সমর্থন;
২। উৎপাদন ও বণ্টন ব্যবস্থার সামাজিকীকরণ ও সুষম বণ্টন এবং সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ, উপনিবেশবাদ, নয়া উপনিবেশবাদ ও একচেটিয়া পুঁজিবাদ বিরোধী কৃষক-শ্রমিক রাজ কায়েম এবং ধর্ম, বর্ণ ও ভাষা নির্বিশেষে সকল নাগরিকের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা;
৩। পূর্ব বাংলায় উৎপাদিত পণ্যের বিকল্প সকল বিদেশী পণ্য বর্জন;
৪। পূর্ব বাংলার সর্বস্তরে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন;
৫। শেখ মুজিবুর রহমান খাজনা, ট্যাকস বন্ধের যে আহ্বান জানিয়েছেন তা যাতে সুষ্ঠুভাবে পালিত হয় তজ্জন্য সংগ্রাম পরিষদের মাধ্যমে লবণ শুল্ক, নগর শুল্ক, হাট-বাজারের তোলা, খাজনা, ইনকাম ট্যাক্স, কৃষি ট্যাক্সসহ সমুদয় ট্যাক্স প্রদান সুসংগঠিত ভাবে বন্ধ রাখা;
৬। নিরস্ত্র নিরপরাধ জনগণকে গুলি করে হত্যা করার অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল সামরিক সৈন্য, কর্মচারী ও সরকারী কর্মচারীদের নিকট নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী বিক্রি বন্ধ রাখা;
৭। পূর্ব বাংলার বর্তমান খাদ্য ও অর্থনৈতিক সংকটের সময়ে যাতে কোন দ্রব্য সামগ্রী সীমান্তের অপর পারে চোরাচালান না হতে পারে তার দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা;
৮। ত্রিশ লক্ষ টন খাদ্য ঘাটতি পূরণের নিমিত্ত স্বেচ্ছায় উৎপাদন বৃদ্ধি এবং পতিত জমি ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা;
৯। পূর্ব বাংলায় অবস্থিত পশ্চিম পাকিস্তানী ব্যাংকসমূহে কোন টাকা জমা না রাখা;
১০। দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক রাখার জন্যে কালোবাজারী ও আড়তদাররা যাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য মওজুত করতে না পারে সেদিকে দৃষ্টি দেয়া;
১১। বাংগালী-অবাংগালী, হিন্দু-মুসলমানের দাংগা বাঁধিয়ে গণসংগ্রামকে বিপথে পরিচালিত করার ষড়যন্ত্রকে প্রতিরোধ করা;
১২। বাংগালী জাতির মুক্তির আন্দোলনের নামে টাউট ও প্রবঞ্চকরা যাতে চাঁদা তুলতে না পারে তার প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখা;
১৩। বিদেশী সৈন্য যাতে পূর্ব বাংলার মাটিতে অবতরণ করতে না পারে, তজ্জন্য চট্টগ্রাম ও খুলনার সামুদ্রিক বন্দরগুলোর প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখা;
১৪। গণবিরোধী শাসক চক্রের তমঘা, খেতাবসহ বিভিন্ন উপঢৌকন বর্জন করা।
[সূত্রঃ ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র’, দ্বিতীয় খন্ড, পৃঃ ৭২৩-২৪।]