MD Wahedul Islam Sagor
বাগমারা হাজারদুয়ারি
জমিদার বাড়ি:
বাংলাদেশের রাজশাহী জেলার বাগমারা উপজেলার যোগীপাড়া ইউনিয়নের বীরকুৎসা গ্রামে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা।
এই প্রাসাদটি “বীরকুৎসা জমিদার বাড়ি” বা “বীরকুৎসা পরগনা” নামেও পরিচিত।
ইতিহাস ও প্রতিষ্ঠা:
নওগাঁ জেলার আমরুল ডিহির রাজা গোপাল ধাম তাঁর কন্যা প্রভাতী বালার বিয়ে দেন ভারতের কাশী থেকে আগত বীরেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। বিয়ের পর রাজা গোপাল ধাম বীরকুৎসা পরগনাটি তাঁর কন্যা ও জামাতার নামে লিখে দেন। প্রভাতী বালার শৌখিনতার কারণে বীরেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায় এখানে একটি সুরম্য অট্টালিকা নির্মাণ করেন, যার দরজা ছিল এক হাজারটি। এই দরজার সংখ্যার কারণেই এটি “হাজারদুয়ারি” নামে পরিচিতি লাভ করে।
স্থাপত্য ও বৈশিষ্ট্য:
প্রাসাদটি প্রায় ৫০ বিঘা জমির উপর নির্মিত। এর দরজাগুলো সেগুন কাঠের তৈরি এবং তাতে সূক্ষ্ম কারুকাজ করা ছিল। দরজাগুলো তিনটি স্তরে সাজানো ছিল: প্রথমে কাঠ, তারপর লোহার গ্রিল, এবং শেষে দামি কাঁচে মোড়ানো। প্রাসাদের সামনে ছিল বাহারি ফুলের বাগান, পশ্চিম দিকে একটি সান বাঁধানো পুকুর, এবং ভেতরে জলসা ঘর যেখানে কলকাতা থেকে ভোলানাথ অপেরা এসে গান-বাজনা করত।
বর্তমান অবস্থা:
১৯৪৭ সালে বীরেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবার ভারতের হুগলী চন্দনগরে চলে গেলে প্রাসাদটি সরকারের দখলে চলে আসে। বর্তমানে এটি সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অনেকাংশে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দরজাগুলোর কাঠ, লোহার গ্রিল এবং কাঁচের অংশগুলো অনেকটাই নষ্ট হয়ে গেছে।
ভ্রমণ নির্দেশিকা:
রাজশাহী শহর থেকে বাসে বাগমারা উপজেলা সদর ভবানীগঞ্জে আসার পর অটোরিকশায় বীরকুৎসা গ্রামে পৌঁছানো যায়, যা ভবানীগঞ্জ থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে। এছাড়াও, নওগাঁর আত্রাই বা নাটোরের মাধনগর স্টেশনে নেমে অন্য বাহনে করে আধা ঘণ্টার মধ্যে জমিদারবাড়িতে পৌঁছানো যায়।
এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটি বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন। উপযুক্ত সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করা জরুরি।